বই মেলা প্রাঙ্গণ থেকে: ভাষার মাসের দ্বিতীয় দিন থেকেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা। মেলায় প্রতিবছরই শিশুদের জন্য আলাদা চত্বর থাকে। প্রকাশিত হয় অনেক বই, অনেক ধরনের বই। এবারও তাই হয়েছে। তবে এবার শিশু সাহিত্যে প্রাধান্য পেয়েছে বঙ্গবন্ধু।
প্রত্যেকটি শিশুতোষ প্রকাশনা সংস্থা তাদের প্রকাশনা স্টলগুলোতে এনেছেন সর্বনিম্ন ৬টি থেকে ১৪টি নতুন শিশুতোষ বই। শিশু চত্বরের অধিকাংশ স্টলগুলোতে কথা বলে জানা গেছে সব প্রকাশনীতেই এবার বঙ্গবন্ধুকে প্রাধান্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক একাধিক শিশুতোষ বই এনেছেন তারা।
জনপ্রিয় শিশুতোষ প্রকাশনা সংস্থা ঝিঙ্গেফুলের প্রকাশক গিয়াস উদ্দিন খোসরুর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এবার আমাদের প্রকাশনীর নতুন বই এসেছে চৌদ্দটি। এর মধ্যে ছয়টি বই এনেছি বঙ্গবন্ধু বিষয়ক। 'শোনো এক খোকার গল্প' ও 'আমার মুজিব'র মতো বইগুলোতে শিশুদের উপযোগী করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।
মেলার ষষ্ঠ দিন শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ছিল প্রথম শিশুপ্রহর। এদিন প্রবেশদ্বার খুলে দেওয়া হয় সকাল ১১টায়। শিশুপ্রহর চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এই পুরো সময়টা খুদে পণ্ডিতেরা ঘুরে বেড়িয়েছে মেলাজুড়ে।
শিশুপ্রহরে অংশ নিতে শুধু ঢাকাই নয় ঢাকার বাইরে থেকেও এসেছে অনেকে। বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রথম বারের মতো বই মেলার শিশুপ্রহরে অংশ নিতে রংপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন জান্নাতুল লামিয়া। লামিয়া এবার স্টান্ডার্ড টু'তে পড়াশোনা করছে।
মেলায় এসে পছন্দের লেখকদের সঙ্গে দেখা ও কথা হয়েছে। সেলফি তুলতেও ভুল করেনি এই ক্ষুদে পাঠক। লামিয়া জানালো সেটি বেশ কয়েকটি বই কিনেছে। এর মধ্যে দুটি নাচ শেখার বই আর একটি বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বই রয়েছে।
শিশু একাডেমির পরিচালক আনজির লিটনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, শিশু প্রহরের দিনটায় এই চত্বরের সার্বিক পরিবেশে আমি স্বর্গীয় আবহ অনুভব করি। শিশুতোষ প্রকাশনার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও একটা সুশিক্ষিত আগামী প্রজন্ম গড়তে আমাদের অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। বাচ্চাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে সচেতনভাবে ভালো কিছু বই সন্তানদের হাতে তুলে দিতে হবে। যেসব বই তাদের চরিত্র ও জীবন গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এবার অবশ্য শিশুতোষ প্রকাশনা সংস্থাগুলো বই প্রকাশের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকে প্রাধান্য দিয়েছে। এটি খুব প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
প্রথম বারের মতো এই দেশে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পপ আপ বই প্রকাশ করছে প্রগতি পাবলিসার্স। প্রকাশনা সংস্থার দায়ীত্বশীল আশরার মাসুদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের প্রকাশনী থেকে শিশুদের জন্য এবার নতুন বই এনেছি আটটি। যার মধ্যে প্রথম বারের মতো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি পপ আপ বই রয়েছে।
এছাড়াও সাত ভাই চম্পা ও সিসিমপুরের স্টল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরাবর ভূত ও রম্য কাহিনীর বইগুলোর চাহিদা বেশি থাকলেও এবার বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনীর বই বেশি চাইছে পাঠক ও ক্রেতারা। ছড়া ও ধাধার বইও বিক্রি হচ্ছে বেশ।
এদিকে, শিশু চত্বরে পাঠক ও কচিকাঁচাদের নজর কেড়েছে নালন্দা স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে তৈরি করা বই। নালন্দা স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ের উপর বই লিখেছেন, প্রচ্ছদ একেছেন এবং বাধাইও করেছেন। গ্রিসের পৌরাণিক ইতিহাস থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের লড়াই-সংগ্রামসহ সমসাময়িক সব বিষয় ভিত্তিক বই লিখেছেন নালন্দা স্কুলে পড়ুয়া ক্ষুদে লেখকরা।