সৈয়দ নূরুল আলমের একগুচ্ছ কবিতা

, শিল্প-সাহিত্য

সৈয়দ নূরুল আলম | 2023-08-26 19:14:38

মধ্যরাতে, ধবল জ্যোৎস্নায়

মধ্যরাতে ধবল জ্যোৎস্নায় যন্ত্রণা বাড়তে থাকে
মাতৃজঠরে ভ্রুণের মতো। এক সময় কষ্টগুলো
স্কেলিটার বেয়ে উঠে আসে বুকের ভেতর,
দুচোখে নামে অন্ধকার। তারপর ভালোবাসার
আগুন ধরে যায় হৃদপিণ্ডের থলিতে।
শহরের বেশ্যা অথবা সিফিলিস রোগী, যখন
যাকে পায় স্বপ্নকে খুঁজে পেতে তাকে
জাপটে ধরতে চায়। বেহিসেবী নদী
একসময় সমুদ্র হয়ে যায়—
দুকূল উপচে পড়ে ভালোবাসার বিষ ফেনায়।

প্রেম আর আগুন

কবিতায় কেউ খোঁজে প্রেম, কেউ খোঁজে আগুন
রবীন্দ্র কবিতা যেখানে প্রেমের
নজরুল সেখানে আগুনের
প্রেম আর আগুনের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি হয়
দ্রুপদী কবিতা, কখনো ক্লাসিক নাটক
কখনো-বা জীবনঘেঁষা চলচ্চিত্র।
এভাবে জেগে আছে রবি, ছেয়ে আছে নজরুল
থাকবে যতদিন পাখি ডাকবে, বাতাস বইবে
বৃষ্টি নামবে অই দূর গাঁয়।

উষ্ণতা চাই, চাই না

নিকষ কালো শীতের রাত, বাইরে বজ্রবৃষ্টি-তুষারপাত
আশি বছরের আকুমিয়ার লুঙ্গির নিচে আগুনের মালশা
মেহেরুননেসার বুকে লেপটে থাকা দুগ্ধপোষ্য শিশু
লেপের নিচে প্রেমিক প্রেমিকা-সবাই উষ্ণতা খোঁজে
উষ্ণতার বড় আকাল, পেতে ব্যর্থ সবাই।
অথচ আমাদের পৃথিবী যেভাবে উষ্ণ হচ্ছে
ক্রমেই সেটা একটা ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে
অসম সমাজে অনেকেই এ সত্যটা স্বীকার করে না।

অজ্ঞান এবং পাথর
(কবি বেলাল চৌধুরীকে উৎসর্গকৃত)

গত কয়েকদিন ধরে পাখি নয় শুনেছি শুধু কাকের ডাক
মা বলতেন কাকের ডাক ভালো নয়, মৃত্যু বা কুসংবাদ নিয়ে আসে কাক
কবি চলে গেলেন তাই ভাবছি বসে মা’র কথা মিথ্যে হয় না, মা তো!
কবি ছিল বলেই পৃথিবীটা ছিল এত বর্ণময়
কবিতার সঙ্গে কবির দীর্ঘস্থায়ী সুসম্পর্ক ছিল বলেই আজিজ মার্কেটে
উল্লাসের স্রোত বয়ে যেত। কবি নেই, বইয়ের রেকে আছে কবির
বর্ণাঢ্য মুখচ্ছবি। ভালোবাসার রঙ।
কবি কি দেখছে, কবিকে হারিয়ে তার পাঠক আজ অজ্ঞান এবং পাথর।

হে অনিন্দ্য সুন্দর বোশেখ

আজ এ চৈত্রসংক্রান্তিতে সব কষ্টগুলো সংকলিত করে ফেলেদি ভাগাড়ে।
আগামীকাল বোশেখের প্রথম প্রহরে প্রজাপতি উড়বে রমনার বটমূলে
টিএসসির সড়ক দ্বীপে কিংবা আর্ট কলেজের করিডোরে। কারুকার্যময় আগুনরঙা ঠোঁটে ফুটবে বোশেখের ফুল বাতাসে ভাসবে ঢাকঢোল আর বাঁশির সম্প্রীতির সুর। হে অনিন্দ্য সুন্দর বোশেখ, তোমার জন্য প্রস্তুত নারী, মন ও বন। তোমার মতো করে তুমি এসো।

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

এ সম্পর্কিত আরও খবর