প্রদীপ করের একগুচ্ছ কবিতা

, শিল্প-সাহিত্য

প্রদীপ কর | 2023-09-01 14:52:27

 

প্রহরা

এ শহরে আমার কোনো পাপ নেই
তবু এক মধ্যরাতে অকস্মাৎ আবিষ্কার করি, আমার সন্তান
আমার শরীর থেকে অসামান্য দূরে অবতল কুঁকড়ে শুয়ে আছে।
ভয়ে?
ঘনতমসায় দেহ ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি। শরীরের গন্ধ শুঁকি

সকালে স্নানের পর শালিখ পাখির পথে হেঁটে হেঁটে গেছি
তারপর সারাদিন অসংখ্য চরিত্রে অভিনয় করে
                                                 সময়ের অসুখ কিছু সংগ্রহ করেছি।
তেজষ্ক্রিয় অপমান, অগভীর লাঞ্ছনাক্ষত, ঈর্ষার নীল বাষ্পবিষ
ঝলমলে আলোর মতো মিশে গেছে আমার শরীরে।

স্বপ্নের মতো এই আলোজ্বলা ঘরে, ধড়ফড় উঠে বসি, মাঝরাতে
স্নানঘরে গিয়ে সাবানের সচেষ্ট ফেনায় নিংড়ে নিংড়ে সব
ধুয়ে ফেলতে চাই। সব। সব...

সহস্রাব্দের ক্লেদ জন্মান্তর পেরিয়ে ত্বকের গভীরে নেমে গেছে
সামাজিক আজ্ঞাবহ পাপ অভিভাবকের মতো, শুধু বহন করেছি

সন্তান ঘুমায়।
শতাব্দীর মিথ্যা আকাশ আমি দু’হাতে ধারণ করে
                                             নিদ্রাহীন বসে থাকি শিশুর শিয়রে...

আলপথ

দু’টি ক্ষেত্রকে ভিন্ন করেছে আলপথ। এই অভিমানে
                                                       কৃষক পরিচর্যা করে না তার।
কৃষক লাঙল দেয়, ক্ষেত্রশরীরে দেয় জল
শ্রমের প্রবন্ধস্রোতে জেগে ওঠে অনন্ত ফসল...

আলপথ চুপচাপ দেখে আর দু’প্রান্তের জমিগুলিকে আঁকড়ে ধরে রাখে
অন্যমনস্ক ধান ঝরে পড়ে গুচ্ছ গুচ্ছ তারও শরীরে

রাত্রি নিবিড় হলে সব বিভাজন ভেঙে হেঁটে যেতে ইচ্ছে করে
কৃষকের গৃহে। চাষী আর চাষীবউ সন্তানকে ‘আলপথ’ করে
যেই ঘুম অঘোরে ঘুমোয়, সেই ঘুমের ভিতরে।

মধ্যাহ্ন-ডিঙোনো আলোয় চাষীবউ ভাত নিয়ে আসে
অন্নপূর্ণা আলোয় প্রতিবেশ ঝলমল করে

আলপথে বসেই অন্নগ্রহণ করে তারা
সে মুগ্ধ হয়ে দেখে,
                     কৃষকের অন্তর্লীন ক্ষুধায় পরিপূর্ণ হয়েছে বসুধা...

সুজাতা-বুদ্ধ সংলাপ

মেঘভাঙা বর্ষণের নিচে
একটি দু’টি করে জেগে উঠছে অসংখ্য ধানচারা

শাশ্বত এই সংলাপটইি পৃথিবী রোপণ করছে আজীবন...

আমার বিগত চিন্তাভাবনার পাশে এসে বসেছিল একটি দাঁড়কাক।
অলখিতি শব্দগুলিকে, সে, নিঃশব্দে কঠোর ঠোঁট দিয়ে ঠুকরে ঠুকরে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে অসংলগ্ন অগোছালো করে দিয়েছে। টুকরো টুকরো
সেই ভাবনাগুলিই, অসহায় ফ্যালফেলে তাকিয়ে দেখছে কাকের শরীরে
জমে আছে আমারই তামসগুণ.... কাকচক্ষু জলে টলটল করছে কাম
আর তারই দৃষ্টির সরলরেখায় মিশে যাচ্ছে আমারই মস্তিষ্কের আর্তনাদ।

কাকটি হঠাৎই, উড়ে যাবার আগে, ঘাড়ঘুরিয়ে, একবার মন্ত্র বলল,
মাত্র একবারই বলে উঠল ‘ক’
আমার আর্তনাদের আদ্যক্ষর। মাত্র, আমি যা র্অজন করেছিলাম, এখন
                                                                       শূন্যের ভিতরে বিলীন!

সর্ম্পক

পেয়ারা গাছের ডালে পাখি এসে বসল
কিছুক্ষণ। তারপর
                       পাখি
                               উড়ে
                                       গেল।

গাছের সামান্য প্রশাখায়
পাখির পায়ের ছাপ অসামান্য হয়ে লেগে আছে

পাখির পায়েও দেখি অদৃশ্য গাছের স্বাদ
ততক্ষণ, যতক্ষণ না
                          অন্য কোথাও গিয়ে
                                                  বসছে
                                                          পাখি..

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর