স্নিগ্ধা বাউলের একগুচ্ছ কবিতা

, শিল্প-সাহিত্য

স্নিগ্ধা বাউল | 2023-08-29 09:35:29

কাতরতা

সময়গুলো পাখায় বয়ে নেয়
এক দুর্বাশার অহম
রুদ্ধতারও বেশি কাতরতার
সুতায় ভর করে কাঁপিয়ে গেল যে আকাশ
সে ঘুড়ির দিব্যি
আমিও হতে চেয়েছি ইন্দ্রাণী
অথবা শমন রমণী!

এমন মৃত্যু তবে নেই কোনো জঠরে
যতটা কেড়ে নেই, ততটাই আমার মহাবিশ্ব।

পাঠগণিত

সামন্তের মতো হৃদয় পুঁজিবাদেও
গোঁঙায়
আভিজাত্য গুনে গুনে দেখে
কতটা সিঁড়ি ভাঙলে
শৈশব যৌবনে পৌঁছে যায়!
এমন নয় যে ঝাঁক ছেড়ে
ব্যক্তিগত হৃদয় কেবল দহে—
দেখো আহত হয়েও কেমন
গাঙচিল মেপে যায়
উদভ্রান্ত ঢেউয়ের উচ্চতা;
এ যুগে আমিও
দেয়াল মেপে যাই নিজস্ব আয়তনে
কৈশোরের জ্যামিতি বক্সে ছাপা
আমার স্বপ্নাক্ষর,
কঠিন করে মিলিয়ে রাখি
সম্পাদ্য উপপাদ্যের ব্যক্তিগত
দ্বৈতস্বর।

অবকাশ

বাড়ি ফেরার নামে কোথাও না যাই তবে
এলেবেলে ঘরের মেঝেতে পা বিছিয়ে
বুঝে নিব সিক্ততার মাপকাঠি
মৃত্যুও শুনেছি জালিমের মতো ঠান্ডা;

জানি তুমিও ঘরে ফিরবে
মেঝেতে ঝকঝক করবে সুখ
পায়রার মতো বাকবাকুম করে
ওম নিবে তুমিও;

তোমরা ফিরে যাও তোমাদের সংসারে
বুনে রাখো পাতায় পাতায় ঊণখেলা
গৃহস্থালি জমাও ঐকিক নিয়মে;
র‍য়ে যাব—
নগরসংকীর্তন বোধে আমি, স্বপ্নভূক দেবদারুর
মতো নিশ্চল, পৈশাচিক দূষণ
টেনে নিয়েও বেঁচে যাব
ঘামের এসিডে বিকাব
আমার অবকাশের দিনগুলো।

পৌরাণিক প্রেম

ক্যালিগ্রাফির পাতা জুড়ে দময়ন্তির হস্তরেখা
একটানে দেখা যায় ইতিহাস
প্রিয় দম্পতিগুলো কানপাতে সুমেরীয় বাতাসে
সফেদ আকাশ নেমে আসে সবুজ ঘাসে
তীব্রতর আজানের পর
আস্ফালিত হয় এমন ভাগ্যদেবতা!

কোন হরফে তবে ডেকে আনা যায়
ঐরাবতীয় রুষ্ঠতাকে
সীসার গুঞ্জন আত্মায় মেখে
হাহাকার করে নলরাজা; হুঙ্কারে জানান দেয়
একপ্রস্থ ঈন্দ্র,
সপ্তস্বর্গ ভাঁজ খুলে অজানা দূতের ঠোঁটে
অমরকাব্য, রেকাবের দ্বার, আস্ফালন;
কবিতায় তবে মৃত্যুও আসে
কবির শতজন্মের পর।

ভোগবাদ

খসে যাওয়া পাতার মতো গমন পদযাত্রা
শুরু থেকেই ভেবেছিলাম সূর্যের মতো ডুবে যেতে পারে
অথচ এক সূর্য কতবার ডুববে!
তবে অজস্র পাতার মতোই তার ঝরে পাতা।

চলে যাওয়া এমন কিছু না
চলে যায় সত্য আর চলে যায় জন্ম
অপেক্ষায় ছিলাম—তোমার চলে যাওয়ায়
ফুটন্ত কেটলী জুড়ে চা চলছিল;
শান্তি!
এক কাপ চা যদি জীবনে একা খাওয়া যায়
তবেই ভোগ।

আমি ভোগবাদী—
ছিন্নভিন্ন করে তোমার সব কেড়েছি
দেখেছি আস্ত হৃদপিণ্ড জুড়ে কাদা
থোকা থোকা রেণুহীন ফুল;

এইসব দিনরাত খেয়াল এক খেলা
আতঙ্কিত আমি
মৃত্যুর পর যেন তোমার ছায়াও না দেখি
একবার দেখায় অজস্র শব্দের ব্যবহারে
বলেই দিব “তোর চৌদদো গুষ্টি খানকি”;
অথচ এটাই আমার ভালোবাসা
যন্ত্রণা থেকে তৃপ্তি-যন্ত্রণায় যাবার চেষ্টা।

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

এ সম্পর্কিত আরও খবর