রহিমা আফরোজ মুন্নীর একগুচ্ছ কবিতা

, শিল্প-সাহিত্য

রহিমা আফরোজ মুন্নী | 2023-08-31 11:50:08

কাজলরেখা গো

তুমি নিজে তোমার ইচ্ছার বিপরীতকাল বয়ে বেড়াও। বেড়াতে বেরিয়ে সে কি জ্যাম আর ঘ্যাম, তারপরেও সে কি বেড়ানি তা মালিকই বলুক। যেন না-ই হলো তোমার বুঝবার সাধ, না-ই হলো সাধ্য, নাহক পেয়ারি বান্দি তুমি, কাজলরেখা গো, রিডাকশন চলাকালীন আজও তুমি আর তোমার মহাজন একই পেয়ালায় পান করো

রিডাকশন পিরিয়ড তো, ধরো পিরিয়ডের দিনগুলার মতোই, অতিরিক্ত ক্ষরণ, রক্তে হিমগ্লোবিনের খামতি, খামতি পোষাতে কড়া লিপস্টিক আর কালোয় লেপে কাজলরেখা গো, সে কি আহ্লাদ তোমার—বেড়ানোর ছল ধরে সব জল সয়লাব করে এসে বলো, আরে; এসব একশো আনা আপেক্ষিক। তাহলে নিজের পক্ষে যেটা যায় যেমন সেটাকে পারলে নাসা থেকে সার্টিফাই করে আনা কেন?

এই খেলা রিংয়ের ভেতর হয়

কোনো কথা বলার নাই দেখে আমরা ইনিয়ে বিনিয়ে নাহয় বানিয়েই ঝিমাব, চারহাত অবশ আমাদের, লটপটে ঝুলে কখনো হাতা তার হাফ কখনোবা থ্রি কোয়ার্টার ধরে, দিনের পর দিন ঠিক কথা বলার ঠিক নিয়ম আবিষ্কার শেষ আমাদের, শেষ হরেক কিসিমের যৌনাবেদনের নিবেদনও, এরপরে ঠিক সময়ে ঠিক আঙুল তোলাও শেষ আমাদের, অলস লেপ্টে থাকা হাতাগুলায় ছাতা ধরেছে, নাহ! এবার ভাবচিত্রে ভাবছি একটু গতি দরকার, দেখি ফুঁক দিয়ে নড়াতে পারি নাকি, হোক নাহয় সেটা কানেরই লতি, বা এবারই হোক সশব্দে ঠক্কর লাগুক দাঁতে দাঁতে, পিষিয়ে ছাতু বানালেই জিত।

আমাদের বাঁকা চোয়ালে তোমাদের তুলে রাখি?

তোমাদের বয়স্ক-মুখ
তোমাদের শিশু-চিত্ত
ভয় আর আশঙ্কায় টানটান
ভুল করে কিছু খেয়ে ফেলেছো?
লুকিয়ে কিছু দেখে নিয়েছো?
স্পর্ধা-ভরে কারো দিকে আঙুল তুলেছো? 

তোমাদের ফ্যান্টাসি বটে!
তোমরা কারো তোয়াক্কা করবে না
তোমরা আমাদের রাগ বাড়িয়ে দিয়ে, এখন বুঝি আর কমাতে পারছো না?

 ভয় করো না, কতবার বলেছি?
একবার ভেঙে ফেললে জীবনকাবারি
তারপর ভাইবোনে মিলে শান্ত হয়ে ঘুমানো
ব্যস! এই এত একটুখানিই তো
বিশ্বাস করছো না? 

হু, আমাদেরও বিশ্বাস হতো না
আমাদেরও ভয় ভাঙত না
কিন্তু আমরা চমৎকার অভিনয় জানতাম, কারণ
পাঠ্যসূচিতে এটাই ছিল একমাত্র
ঠিক বুঝেছো, আমরাও তোমাদের মতো মিথ্যা বলতাম
তারপর হাত থেকে ময়লা ঝাড়ার ভঙ্গি
মুখে সাফাই তৈরি
হেহেহে মিথ্যা বলতে বাধ্য হয়েছি 

আমরা আমাদের জানতাম, এখনো জানি
কিন্তু পুরানো আমরা এত গাঁইয়া
স্বীকারে আমাদের ইগোতে যে ঠসা, তার বেলা? 

বাদ দাও আমাদের কাল, অলরেডি গেছে গিয়া
ঠিক হবারও না, ডাক্তার শেষকথা বলে দিয়েছেন
ডেট এক্সপায়ার্ড
ভয় পাই নাই একদম, রিল্যাক্স লাগছে বরং 

ট্রাস্ট মি
আমি জান লাগিয়ে লড়ব
শুধু বলো
সব দুর্ভেদ্য ভেঙে ভেঙে বলো
সব আড়াল তুলে ডিটেইলস বলো 

এমন কোন ভয় যা তোমাদের গ্রাস করে?
কেন জমে গেছে তোমাদের শিরা উপশিরা?
অবশিষ্ট তীব্র আগুন শুধুই তোমাদের রক্তে, আর
আমাদের তো দিন গিয়াছে চলি, এদিকে
সুসময় ঠিক তোমাদের পিছে পিছেই আসছিল 

ওহ বাচ্চারা!
এত তীব্রতা, এত তাড়াহুড়া
তোমাদের তো ডানাও নাই যে উড়ে এড়িয়ে যাবে খানাখন্দ 
তবুও জোড়া হাত খুলে রেখেছিলে
কেন? 

তোমাদের বিষণ্ণতা অপূর্ব
তোমাদের বিষণ্ণতা বানানো
তোমাদের নুয়ে পড়া চোখের কোল
তোমাদের আশ্চর্য সুন্দর চোখের জল
সব সুন্দর, সব বানানো 

বানানো সব একদিন ডেট এক্সপায়ার্ড বলে ঘোষণা করা হবে
কিন্তু তোমাদের আশ্চর্য সুন্দর শিশু চোখ বলেই যাবে,
বলেই যাবে... 

গিলতে হবে ধীরলয়ে

মস্তো তোড়জোর তার! কখনো ফুঁসছে, কখনো ছ্যাঁচড়াচ্ছে, ছিঃ! কী আপত্তিকর ভঙ্গি, ফাঁকে খাচ্ছে ডিগবাজিও, খাসিলতের খানকিপনা আপনাতেই আয়োজিত; আরে, বচনামৃত পান করবার এখন সময় না বিবেকের বাপ! যাত্রার মরশুমে মিলন হবে আপনার আমার; আরে, নিজে সে একজোড়া বিপরীত বাতিক বয়ে বেড়ায়, মাংস তার পছন্দ কিন্তু ন্যাংটা সে দেখতে পারে না, ভালো লাগতে থাকলে গিলতে শুরু করে এমন দ্রুততায়! ফলে যা হবার; ছোটখাটো যেমন এই দেহ, হুড়মুড়িয়ে সেঁধিয়ে গেল! ফলে যা হবার; এমন পিষলে তারে যে, নিজেকে আর ঠাহর করতে পারল না, খোদা মালুম ইহজন্মে তার সন্দেহ যায় কি!

মুচলেকা

মাত্রই ছিল সব ঠিকঠাক, কী খুশি ছিলাম আমিও...! না মানে ঠিকঠাক আরকি, কে জানত একটু বাদেই এমন উল্টাবে বাতাস

মাত্রই যদি তড়িঘড়ি না সরাতাম কান থেকে, ফোনের কথা বলছি, ফুটা করে দিত কান, আপত্তি নাই, মনে ফুটা না হলেই হলো, অচল মুদ্রা তার আবার বাঁজা মানে খোঁজা!?

তোমাকে একটুও বিশ্বাস নাই

আবার যদি পিছলাও! আবার যদি করো এমন ছিনালী? বলবে মাত্র উঠেছে মোচ, বলবে মাত্রই ছেড়েছো মাঁই চোষা, তাই অভ্যাসবশত আরকি

ধরো, ধরেই খুনাখুনি, তারপর কত হুজ্জত ভেবেও দেখিনি। জেল জুরমানা এসবের অভ্যাস শতবার্ষিকীতে এসেও সয় না, তারচেয়ে ভালো ঘুমিয়ে পড়ি, তারচেয়ে ভালো আগে না বাড়ি

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

এ সম্পর্কিত আরও খবর