জেগে ওঠো জীবন আনন্দসোনা

কবিতা, শিল্প-সাহিত্য

হাসান হাফিজ | 2023-09-01 21:11:41

কেন করো

সত্যের স্বাদ তেতো কিন্তু
কলঙ্ক হয় মিঠে
পাপের মগ্ন কোমলতায়
পিছলিয়ে যায় পা
নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে
ফেরত পাচ্ছো না।
সবার জন্যে কলঙ্কভাগ
হওয়ার মধ্যে আছে
তৃপ্তি পাবার মতন কিছু
মনবিবেকের কাছে
সত্য কঠিন সত্য সাধন
বৈরাগী মন চায়
কিন্তু সে হয় ঘরপালানি
নিঝুম নিরালায়
সত্য স্বাধীন মন পরাধীন
মনের জ্বালা বড়ো
ও মন তুমি কেমন করে
এমন কাজটি করো?

মৃত্যু হঠ্ যাও

আধো ঘুমে আধো স্বপ্নে আধো অল্প জাগরণে
মনে মনে জপে যাচ্ছি জীবন তোমারই নাম—
মধ্যযাম শেষ হয়, উঁকি দিতে উদ্যত হয়েছে ভোর
সে প্রসন্ন উত্থানের আগেভাগে হয়তো কিছুটা
অবসন্ন, প্রকৃত সে আধো ক্লান্ত আর্তি মনোচোর
তাকে বলছি ফুলের উপমা, সে বিহঙ্গ নিরুপমা
উড়ে উড়ে বেড়ায় মোহান্ধ-সত্যে ওড়ে পোড়ে বহু দূর
পাষাণের প্রাণ ভেঙে জেগে ওঠো জীবন আনন্দসোনা
মৃত্যুকে রাঙাও চোখ, মৃত্যু এক মর্মান্তিক যন্ত্রণা অসুর...

দাও গো উড়াল

.
উদ্বেগ চতুর খুবই, অতি দ্রুত সংক্রমিত হয়
মানুষের মগজেই নির্বিবাদ রাজ্যপাট, অন্য কোথা নয়

.
ফ্যাকাশে পাণ্ডুর হয়ে আসছো তুমি পাখি
খাঁচা ফেলে উড়াল দেয়ার বুঝি
এসে গেছে মোক্ষম সময়
নাই দ্বিধা ইতস্তত অথবা সংকোচ
আঁধার এভাবে গাঢ় হয়

.
পাথর পাথর অন্ধ পাথর
আমার দিকে নিপুণ ছুড়ে মারো
আঘাত পেয়ে উল্লসিত
আনন্দ পাই আরো

.
এই দেহ এই আত্মা এই স্নিগ্ধ ফুলের ইশারা
কিভাবে সম্ভবপর বেঁচে থাকা ওর স্পর্শ ছাড়া

.
ভাসতে ভাসতে জীবন ভেলায় মরণ ছবির আঁকা
শেষ হলো না আঁকার গর্ব—তাই ক্যানভাস ফাঁকা

বিষণ্ণ বেহালা-দাহ

চিন্তার ধোঁয়ার মধ্যে উড়তে থাকে জাগতিক স্বপ্নমালা
উড়ুক্কু স্বভাব তার চাতুর্যের চূড়া ছোঁয় ওড়ে দিগ্বিদিক
ধোঁয়ামেঘে আকাশের আদিঅন্ত দিগন্তসন্ধ্যার ছবি
গোধূলিয়া ইচ্ছাপূরণের গল্প সবই ওড়ে ছাইভস্মে
ওই ডানা ধার করে কবিও তো উড়তে পারে ইচ্ছেমতো
কিন্তু কবি হারিয়ে ফেলেছে তার ব্যথাতুর ওড়ার বাসনা
নিজেই নিজের কাছে অস্বচ্ছ আয়নার কষ্ট মর্চে পড়া ধুলো
এমন আশ্চর্য ধন্দে কোথায় লুকোনো যায় তেমন গহ্বর কই
তারই খোঁজে কেটে যায় একেলা বিরহবেলা একেলা জীবন
চিন্তা নয় চালধোয়া স্নিগ্ধ হাত জীবনানন্দ কবি যার সখ্য চেয়ে
একেলা নিজেরই মধ্যে গুমরে গুমরে বিষণ্ণ বেহালাছড়ে দাহে
উদযাপন করে গেছে উপেক্ষা ও বঞ্চনার তপ্ত খর শীতার্ত সময়
সে কবি নিঃসঙ্গ ছিল লোকালয়ে নৈঃসঙ্গ্যের ধু ধু চর্চা মনোমতো
করা হয়তো সম্ভব ছিল না সত্য, তারপরও দীর্ঘশ্বাসই ব্রত মেনে
পুড়েছে হাওয়ায় পুড়ে একাকীত্বে বিদীর্ণ বিশীর্ণ হয়ে একা হয়ে
চিন্তা তুমি মনোলগ্না ধূপ হয়ে চৈতন্যের কেন্দ্রমূলে জ্বলতে থাকো
জ্বলো অনিঃশেষ তুমি আঁধারে একক দুঃখে ঘষে ঘষে জ্বালাও জীবন
এই আটপৌরে মর্ম থেকে বিষাদিত মননের মুক্তি ক্ষমা দাও...

মানুষ জানে না

অনলাইনে ছড়িয়ে দিলাম
যাবতীয় দুঃখমেঘ
যদি কোনো বৃষ্টি হয়
জলের সুগন্ধ পেয়ে
মাটি যদি শস্যবতী হয়
তবে আমি চিরন্তন খুশি
আনন্দের ছিটেফোঁটা
কিছুমিছু যৎকিঞ্চিৎ
তোমরাও পাবে
চোখ উল্টে অকৃতজ্ঞ হয়ে ওঠা
আমার স্বভাবে নেই
ভালো তোমরা জানো
কিন্তু সেই দুঃখমেঘ
ভুলে গেছে ওড়াউড়ি
মানুষেরই নির্দয়তা
যৌতুকের লোভ
বৈষম্যের বিষ
হয়রানি যৌন নিপীড়ন
সেই মেঘকে পাথর করেছে
বৃষ্টি আর কোনোদিনই
হবে না হবে না
সম্ভাবনা যেটুকু যা ছিল
উবে গেছে কোন্ কবে
হতচ্ছাড়া মানুষ জানে না...

লেখা আর শেখা

কষ্ট লিখি ক্ষত লিখি চিঠি লিখি দৃষ্টি লিখি
চড়াই উৎরাই ভেঙে ঠেকে ঠেকে চলতে শিখি

পাখি তারা ডানা ভেঙে পড়ে আছে
গাছের খোঁড়লে প্যাঁচা বাসা বেঁধে আছে
ফুলের পাপড়িতে রোদ চুমো খায়
মনের বাসনা ওড়ে ভ্রমর পাখায়
জোনাকিরা সাধ্যমতো আলোক ছড়ায়
এইসব গল্প লিখি এইসব তথ্য আঁকি
এরমধ্যে নেই কোনো ধূর্ততা ও ফাঁকি
এভাবে জীবন শিখি এভাবে অস্তিত্ব শিখি
প্রগতি এগোলো নাকি, পড়ে থাকল
বালুচরে জ্যোৎস্নাজলে মাখামাখি ঝিকিমিকি
লেখা আর শেখা মেলো মিলেমিশে বন্ধু হও
তুমি কিন্তু কখনোই নির্বান্ধব একা বোকা নও!

অন্তর্গত বিস্ফোরণ

ক্রন্দনকে বলি
ভেতরে থাকিস না
বের হয়ে আয়—

সে বড্ড বেয়াড়া।
কানে তুলতে চায় না এই কথা।
বের হয় না
হৃৎপিণ্ড ফুসফুস
পাঁজরের অভ্যন্তর
আশেপাশে লেপটে থাকে
চাপা গোঙানির মূর্তি
নিজে নিজে তৈরি করে
গদিতে আসীন হয়

ক্রন্দনের ফোঁটা ফোঁটা
ক্রোধ রাগ—
তারপর একদিন হৃৎপিণ্ডে
বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিহত

এ সম্পর্কিত আরও খবর