গোলাম রাব্বানীর একগুচ্ছ কবিতা

, শিল্প-সাহিত্য

গোলাম রাব্বানী | 2023-08-31 21:38:01

নিউ মায়ের দোয়া ভাঙ্গারি

আজকাল নিজেকে একটা ভাঙ্গারি দোকানের ম্যানেজার মনে হয়, যেহেতু মনে হইতাছে, সেহেতু চলো কানামাছি, তুমি আমি মিলে বড় রাস্তার মোড়ে একটা ভাঙ্গারির দোকান দিয়া বসি, পল্টন মোড়েও হতে পারে লোকেশনটা। দোকানের নাম হবেনিউ মায়ের দোয়া ভাঙ্গারি
ঠেলা আর ভ্যান বোঝাই করে সারাদিন টোকাইগুলো আমাদের জন্য কুড়িয়ে আনবে কাঁচা পাকা ভাঙা ঘরের মাল সামান, বাঁধানো ফ্রেমের পারিবারিক ছবির আংশিক অংশ, আয়নার টুকরা, টেপ খাওয়া সিলভারের হাড়ি পাতিল, হাতের বালা, কফির মগ, পিতলে বাঁধানো ছাইদানী, পিকদানী, গহনার খালি বাক্স, রেজার, সাবানের কেস, হ্যাংগার, তজবি দানা।
বস্তায় বস্তায় আসবে লিফলেট, পোস্টার, দাবি দাওয়ার রঙিন সব ছেঁড়া ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড আর মোচড়ানো ব্যানার।
আর কিছু কিছু টোকাই পিঠ বোঝাই করে নিয়ে আসবে ফেটে যাওয়া, টেপখাওয়া, ভাঙাচুরা মন, বিকল হৃদযন্ত্রের কলকব্জা, নাখ, চোখ, দাঁত, মগজ, ছেঁড়া হাত, উড়ে যাওয়া পা।
এসব ভাঙ্গারি কিনে কিনে মজুদ করব। মাস শেষে মহাজনদের ট্রাকে তুলে দেবো কড়কড়া নোটের বিনিময়ে। জানি তুমি বলবে, যা এমন কি হয় কখনো? ভাঙ্গারির দোকান! আর কোনো কাজ পেলে না জগতে?
আমি তখন সিরিয়া, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান আর ইরাকের ভাঙ্গারির বাজার বিষয়ে পুতিন আর ট্রাম্পের সঙ্গে গোপন চুক্তির ফন্দিটা শেয়ার করব তোমার কাছে। আন্তর্জাতিক ভাঙ্গারি গোষ্ঠীর মাফিয়া ডন হব তুমি-আমি। আফিমের নেশায় বুদ হয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বলব, পৃথিবীটা আমাদের, তাই যা খুশি তাই করব।
গোপনসূত্রে খবর পেয়েছি বাংলাদেশেও ভাঙ্গারির ভবিষ্যৎ পুরাই উজ্জ্বল। চল কানামাছি দোকানটা খুলে ফেলি, নাম হবে কিন্তুনিউ মায়ের দোয়া ভাঙ্গারি’..

 সম্পর্ক

আমাদের সম্পর্কটা তো পেন্সিলে লেখা, তাই না?
হ্যাঁ, তাই।
তাহলে তো তুমি সম্পর্কের নামটা মুছে ফেলে
নতুন যে কোনো একটা নাম লিখে ফেলতে পারো কিন্তু,
যেভাবে চাও সেভাবেই হতে পার।
মনে আছে, কতদিন তোমাকে বলছিলাম চল একটা ইকোনো বল পয়েন্ট কলম কিনি, যাই যাই বলে আমাদের আর যাওয়া হলো না দোকান পর্যন্ত।
না গিয়ে কিন্তু ভালোই হয়েছে, বুঝলে কারণেই লোকে বলে, যা হয় ভালোর জন্য হয়। তখন যদি কাগজে কলমে সম্পর্কের নাম-ধাম লিখে রাখতাম তাহলে কি আর
মুছে ফেলার সুযোগ পেতাম বলো?
কাগজটা ছিঁড়ে ফেলা আর পুড়িয়ে ফেলাই হতো তখন একমাত্র অপশন।
অথচ পেন্সিলে লেখা আর আঁকা সম্পর্কের কত মজা দেখছো? না ছিঁড়ে না পুড়ে, যখন তখন মোছা যায় যতখুশি তত লেখা যায় সম্পর্কের নতুন নতুন নাম...
হয় যদি বদনাম হোক না, কোকিল যদি ডাকে অসময়ে ডাকুক না, জ্যামিতি বক্সে কি আর জীবন বন্দি রাখা যায়?

 স্বরূপ

আমি যখন আকার ধরি, বন্ধু তুমি হও নিরাকার
আবার নিরাকার হইলে আমি তুমি পাও আকার...
কী ঠিক কিনা?
তোমার আর আমার মাঝে এই তো জনম জনমের কারবার
আমি তুমি জানি
আয়নায় চোখ রেখে হাজার কোটি বছর কেটে যাবে
তবুও আমাদের দেখা হবে না মিলন ঘাটে
আমরা ত্রিবেণীর ঘাটে নাওয়া খাওয়া শেষে হয়তো ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া খাব,
মুদ্রার এপিঠে বসে ওপিঠ খুঁজে খুঁজে
অযথা মোস্তফা গেমসের মতো লাইফ হারাব
দান দান তিন দান, এরপর কেবলই নিদান, কেবলই সুনশান নিরাকারের উদ্যান।
তবুও আমাদের দেখা হবে না, কথা হবে না, পাশাপাশি হাঁটা হবে না।
অথচ আমরা জানি আমরা একসাথেই হাঁটি, সেদিনও হাঁটব যেদিন পৃথিবী উল্টে গিয়ে পাল্টে যাবে...

 ইন্টারভিউ

চলো দুঃখদের বাড়ি গিয়ে তার ইন্টারভিউ নিয়া আসি
তারে জিজ্ঞেস করি, কেন তার হাত নাই, পা নাই ,কথা বলার স্বর নাই
হামাগুড়ি দিয়েও কেন সে মন বাড়ির চৌকাঠ পার হতে পারে না, কেন সে দৌড়ে পার হতে পারে না দুঃখ বাড়ির নীল সীমানা, কেন সে থাকে অন্ধকারে, কেন সে হাসে না? কখন সে খায়, কখন ঘুমায়, কখন অহেতুক তাকিয়ে থাকে
বিষণ্ণ জানালায়।
তার কি কখনো ফুটপাতে ফুচকা খেতে মন চায়? এই ধর তারে জিগাইলাম, তার প্রিয় রং, প্রিয় খাবার, প্রিয় নেতা আর অভিনেতার কথা, দুুঃখ কি জামা পরে নাকি উলঙ্গ থাকে এরকম প্রশ্নও চামে চিকনে করতে পারি দু একটা।
পকেট ভর্তি করে হাজারটা প্রশ্ন নিয়ে যাব তার জন্য
আমরা দুঃখের ভেতর-বাহির বের করে আনব প্রশ্নবানে।
চল যাই দুঃখদের বাড়ি।
ইন্টারভিউ শেষে দুুঃখকে কানে কানে বলে আসি, দুঃখ আর চোখের জল ফেলো না। মেলা থেকে তোমাকে কিনে দেব আনন্দের খেলনা...

 যাইতাছি

যাইতে যাইতে যাইতাছি
তোমার কথা ভাবতাছি
নিমের ডালে দাঁত মাজতাছি

চোখে কাজল মাখতাছি
কামের ছবি আঁকতাছি
মনে মনে মনকলা খাইতাছি

যাইতে যাইতে খাইতাছি
পথের ধারে মুততাছি
দেখলোনি কেউ তাও আবার ভাবতাছি 

উত্তেজনায় ঘামতাছি
বন্ধ ছিল ফার্মেসি
কী করা যায় ভাবতাছি

গুনগুনাইয়া গাইতাছি
মুন্নি বদনাম হুনতাছি
অন্য গানও সার্চাইতাছি

যাইতে যাইতে যাইতাছি
স্টাইল নিয়া ভাবতাছি
উল্টাসিদাও খুঁজতাছি

যাইতে যাইতে যাইতাছি
তোমার কথা ভাবতাছি
মনে মনে নাচতাছি

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

এ সম্পর্কিত আরও খবর