অনামিকা দাঁড়িয়ে আছে। অনামিকা যেন একটু অন্যরকম। গম্ভীর গলায় বলে, ‘একা একা ঘুমিয়ে পড়লি?’ নেহা অবাক চোখে বলে, ‘একসঙ্গেই তো শুলাম । তুই কী করে বাইরে গেলি? আমি কিছু বুঝছি না। বাড়িটা ঠিকঠাক মনে হচ্ছে না। একবার মনে হল দেয়ালের তাকে কেউ পা দোলাচ্ছে। তারপর তোকে ডাকতে গিয়ে দেখলাম তুই নাই’। অনামিকা বলে, ‘তোর ট্রমা এসেছে খুনটার পর থেকে। তুই আমাকে ছাড়াই শুয়েছিলিস। এবারে আয় শুয়ে পড়ি।’
নেহা আবার দরজা বন্ধ করে, সব ভালো করে দেখে দু’জনে ঘুমোতে যায়। চোখ লাগতে না লাগতেই নেহা দেখে পাশে সত্যি অনামিকা নেই। আর সমস্ত ঘরের জানলা, দরজা সব খোলা। নেহা বিধ্বস্ত হয়ে যায়, নিজেকে পাগল পাগল লাগে। নেহা বুঝতেই পারে তারা কোনো ভুল জায়গায় এসে গেছে। যাকে পাগলি ভেবেছিল সে কী আদৌ পাগলি? ভাবতে থাকে নেহা।
এদিকে, একটা টিভির ঝিগঝিগ আওয়াজ শুনতে পায়। যেন পাশের ঘরে কেউ টিভি দেখছে। তাহলে কী অনামিকা উঠে টিভি দেখতে গেল? ভাবতে ভাবতে নেহা খাটিয়া থেকে আস্তে আস্তে নামে। বাইরের আলো এসে পড়েছে হালকা করে ঘরের মধ্যে। সত্যিই পাশের ঘরে টিভি চলছে। খুব বমি বমি পায় নেহার যেন সে তার অস্তিত্বটা চিনতে পারছে না! তবু নিজেকে নিয়ে দরজার ফাঁকে গিয়ে চমকে যায় নেহা। তার দিকে পিঠ করে তিনজন মেয়ে ওই বেঞ্চিতে বসে টিভি দেখছে। আর টিভিতে কিছুই হচ্ছে না।
নেহা মোবাইলের আলো জ্বালাতেই তিনজন একসঙ্গে পেছন ফেরে। নেহার সারা শরীর ভারী হয়ে যায়! নেহা দেখে, তার দিকে তাকিয়েছে অনামিকা, সেই পাগলিটা আর সে নিজেও। চিৎকার করতে করতে নেহা বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছুটতেই থাকে, ছুটতেই থাকে। অনেক দূরে এসে সেই কয়েকটা বাড়ির সামনে এসে পড়ে। বাইরে থেকে দেখা যায় আলো জ্বলছে, পর্দা ঝুলছে, বাড়িটার। দরজায় গিয়ে বার বার টোকা মারার পর এক ভদ্রস্থ মহিলা তাকে দরজা খোলে।
নেহা তাকে কিছুটা ঘটনা বললে তিনি নেহাকে শান্ত হতে বলেন। নেহা এরপরে ওই বাড়ির বাথরুমে যায়। বাথরুম থেকে ঘরের মেঝেতে পা দিয়ে নেহা চমকে যায়। নেহা বুঝতে পারে ‘সী ইজ ট্র্যাপড বাই’। নেহা আবারও চিৎকার করতে থাকে। নেহা যে বাড়িতে এসেছে আসলে সেটা আগের বাড়িটাই।
পরদিন সকালে একটি ট্রাক যাওয়ার সময় দেখা যায় দুটি মেয়ে মাথা থেকে রক্ত পড়ে রাস্তায় মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। সম্ভবত গত রাতে ট্যাক্সিটা কোনো গাছে লেগে এই দুর্ঘটনা হয়ে তারা মারা গেছে। রাস্তা থেকে একটু দূরে একটা পোড়ো বাড়ির সামনে তাদের চটি, ব্যাগ পড়ে আছে। সবাই বলে এই বাড়িতে ঘুতু পাগলি নামে এক পাগলের আত্মা ঘুরে বেড়ায়। কী ঘটনায় , কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছিল কেউ জানেনা। শুধু তার বেঁচে থাকাকালীন সে যে এই বাড়িতে থাকত সেটা আশেপাশের লোকরা জানে। লোকজন জড়ো হতে থাকে দুটি মেয়ে মানুষের মৃতদেহ ঘিরে। লোকে নানারকম কথা বলতে থাকে... বলতেই থাকে...
‘সেই বাড়িটা’ এই গল্পটি আজ সমাপ্ত হল। আগামী রোববার আরও একটি গল্প আপনাদের জন্য থাকবে।