নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় এ বছর খিরার ফলন খুবই ভালো হয়েছে। কিন্তু ফলন ভালো হলেও উৎপাদিত খিরার বাজার দর কম থাকায় ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা।
যে খিরা কমপক্ষে পনেরো থেকে বিশ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ার কথা, সেসব খিরা এখন বিক্রি করতে হচ্ছে তিন থেকে চার টাকা কেজি দরে। অধিক লাভের আশায় খিরা চাষ করে কৃষকরা এখন উৎপাদন খরচ পুষিয়ে নিতেই হিমশিম খাচ্ছেন।
এ অবস্থায় খিরা চাষ করে চরম হতাশায় পড়েছেন চাষিরা। উৎপাদিত খিরা নিয়ে তারা পড়েছেন বিপাকে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে এ বছর কেন্দুয়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে মোট ২০ হেক্টর জমিতে খিরা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে খিরার সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয়েছে মোজাফরপুর ইউনিয়নে। সবচেয়ে বেশি খিরার চাষ করা হয়েছে।
কৃষকরা জানান, ‘খিরা’ একটি উপাদেয় সবজি। গুল্মজাতীয় সবজির মধ্যে শসার মতো খিরাই একমাত্র কাঁচা খাওয়ার উপযোগী। ‘খিরা’ সালাদের উপকরণ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। গরমে পানির তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি শরীরের চর্বি কমাতেও সহায়ক ‘খিরা’। বাজারে দেশীয় উফশী ও হাইব্রিড দুই জাতের খিরা চাষ হয়ে থাকে। জমিতে বীজ বপনের ১০-১৫ দিনের মাথায় চারা গজায়। এক মাসের মাথায় গাছে ফুল ও ফলের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেয়। দেড় মাস পূর্ণ হওয়ার পর গাছ থেকে খিরা সংগ্রহ করা হয়। অল্প সময়ে স্বল্প বিনিয়োগে অধিক লাভ করা যায়। তাই খিরা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেশি।
মোজাফরপুর গ্রামের কৃষক সাইফুল আলম ছোটন বলেন, প্রতি ১০ শতাংশ (১ কাঠা) জমিতে খিরা আবাদ করতে সার-কীটনাশক ও শ্রমিকসহ ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর প্রচণ্ড শীত থাকার পরও খিরার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। কিন্তু ৩ থেকে ৪ টাকা কেজি দরে এবং প্রতি এক মণ খিরা ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ এসব খিরা পনেরো থেকে বিশ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ার কথা ছিল। রাজধানীর যাত্রাবাড়িসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা প্রতিদনই এসব খিরা কিনে ট্রাক দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
একই এলাকার কৃষক আরাফাত মিয়া বলেন, এক কাঠা জমিতে খিরা চাষ করতে যে টাকা খরচ হয়েছে পুরো জমির খিরা বিক্রি করে সেই টাকা এবার উঠানো যাবে না। বাজারে খিরার দাম নেই বললেই চলে। তিন-চার টাকা কেজি দরে খিরা বিক্রি করতে হচ্ছে। খিরা নিয়ে আমরা খুবই হতাশার মধ্যে আছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, খিরার উৎপাদন দেখতে মোজাফরপুর গ্রামে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের মতে এ বছর যে পরিমাণ জমিতে খিরার আবাদ করা হয়েছে গত বছর সে তুলনায় ছিল অর্ধেক। আবাদ ও উৎপাদন দুটোই বেশি হয়েছে। কিন্তু খিরার ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। তবে আগামী রমজান মাস পর্যন্ত খিরা থাকলে কৃষকরা তাদের উৎপাদন খরচ পুষিয়ে নিতে পারবে বলে আশা করছি।