দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহ। জেলার ৬টি উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে ১২টি নদ-নদী। কিন্তু খননের অভাব আর দখলদারদের কারণে নদীগুলো পরিণত হয়েছে মরা খালে। এখন আর যৌবন নেই নদ বা নদীগুলোতে। পাওয়া যায় না দেশীয় প্রজাতির মাছ। শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। সেখানে চাষ করা হয় ধান, পাট, সরিষাসহ নানা ফসলের।
এই সুযোগে নদীর পাড়ের জায়গা দখল করতে ব্যস্ত দখলদাররা। ঝিনাইদহে নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান।
জানা যায়, ঝিনাইদহের উপর দিয়ে বয়ে গেছে নবগঙ্গা, চিত্রা, কুমার, বেগবতি, গড়াই, ইছামতি, ডাকুয়া, কপোতাক্ষ, কালীগঙ্গা, কোদলা, ফটকী ও বুড়ী নদ-নদী। যার মোট আয়তন ১ হাজার ৬৪১ দশমিক ৭৫ হেক্টর।
ঝিনাইদহ শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে নবগঙ্গা নদী। নদীর বিভিন্ন স্থানে জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ড্রেনের ময়লা আবর্জনা গিয়ে পড়ছে নদীতে। এসব কারণে একদিকে যেমন কমছে নদীর প্রশস্ততা, সেই সঙ্গে মাছসহ জলজ প্রাণী ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। তাই দ্রুত সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি স্থানীয়দের।
ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চন নগর এলাকার ষাটোর্ধ্ব রাশেদ মালিতা বলেন, ‘ছোটবেলায় দেখেছি নবগঙ্গা নদীতে বড় বড় নৌকা আসত। ধোপাঘাটা ব্রিজ এলাকায় নৌকা নোঙর করে ব্যবসায়ীরা ঝিনাইদহ শহরে যেত। কিন্তু সেই নদীতে এখন ডিঙি নৌকাও চলে না। বর্ষা মৌসুমে একটু পানি থাকলেও শীত মৌসুমে থাকে না। হেঁটেই নদী পার হওয়া যায়।’
একই এলাকার পার্থ মল্লিক নামে আরেক বাসিন্দা জানান, জায়গা দখলমুক্ত করে নদী খনন করা হলে নাব্যতা ফিরে পাওয়া যেত। এজন্য জেলা প্রশাসনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
ঝিনাইদহ পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও নদী রক্ষা কমিটির নেতা মিজানুর রহমান জানান, জেলার সবগুলো নদীই এখন দখলদারদের দখলে। এ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য প্রশাসনকে বার বার তাগাদা দিচ্ছেন তারা। কিন্তু আজ পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন দখলদারদের উচ্ছেদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, নবগঙ্গা নদীর উৎসমুখ চুয়াডাঙ্গাতে বন্ধ হয়ে আছে। চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে আসা এ নদীটির মুখ বন্ধ হয়ে আছে বহুবছর ধরে। চুয়াডাঙ্গা জেলাকে অনুরোধ করা হয়েছে উৎসমুখ খনন করার জন্য। এছাড়া যেসব স্থানে অবৈধ দখলদার রয়েছে সেখানে দ্রুতই অভিযান চালানো হবে।