কলমি শাক, লাল শাক, মুলা আবার কখনো কলাই শাক নিয়ে ব্যস্ত ঘাটের এক কোনে জায়গা করে নেন মোস্তাফিজুর। মৌসুম অনুযায়ী চলে বেচা-কিনি। আর তা দিয়ে সংসারে বাড়তি দুটো পয়সার যোগান দেন মোস্তাফিজুর।
দেশের দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষের যোগাযোগের প্রবেশদ্বার কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুট। ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের যাত্রীদের চলাচলকে কেন্দ্র সারা বছরই এ ঘাটটি জমজমাট থাকে। এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষকে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করতে হয়। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে এই ঘাটে মৌসুমি শাক বিক্রি করছে মোস্তাফিজুর রহমান।
মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি গ্রামের লাবলু মোল্লার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান। তিন ভাই বোনের মধ্যে মোস্তাফিজুর বড়। বয়স মাত্র ১৭ বছর। বাবা লাবলু মোল্লাকে আর্থিক সুবিধা দিতে তার ফলের দোকানের পাশেই এক ঝুড়ি কলাই শাক নিয়ে বসেছে মোস্তাফিজুর।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে মোস্তাফিজুরের সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কমের। তিনি জানান, প্রতিদিন সকালে ঘাট সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার বিল, ডোবা ও মাঠ থেকে তোলা কৃষাণীদের শাক সংগ্রহ করি। ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কেজি শাক কিনে নিয়ে আসি। তারপর সেই শাক কাঁঠালবাড়ি ঘাটে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি করি।
মোস্তাফিজুর আরো জানান, সাধারণত যারা শহরে থাকে তারা এ ঘাট দিয়ে যাতায়াত করে। মূলত তারাই আমার কাছে থেকে শাক কিনে থাকে। এছাড়া শাক শরীরের জন্য উপকারী হওয়ায় শহরের ক্রেতারা বেশি কিনে। তা ছাড়া ঘাটে অবস্থানরত হোটেল গুলোতেও এ শাকের চাহিদা বেশি।
তিনি বলেন, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে আর পড়াশুনা করা হয়নি। এরপর বাবাকে সাহায্য করতে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে শাক বিক্রি করছি। ব্যবসা করতে গেলে পুঁজির প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমার ব্যবসায় বেশি পুঁজি লাগেনা। লাগেনা দোকান ভাড়া। তাই আমি বাবার পাশে বসেই এ ব্যবসা করছি। এছাড়া এসব শাক সব সময় পাওয়া যায়। আমার এ শাক মানুষ খুব পছন্দ করে। প্রতিদিন শাক বিক্রি করে প্রায় ৬ থেকে ৭'শ টাকা আয় করি। আর দৈনিক এ আয়ের টাকা থেকে ৫০ থেকে ৬০ টাকা নিজের খরচের জন্য রেখে বাকি টাকা তার বাবার হাতে তুলে দিই।
মোস্তাফিজুরের বাবা লাভলু মোল্লা বলেন, আমরা গরীব মানুষ। প্রতিদিন আমার আয়ের টাকায় আমাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই বড় পোলাডাকে (মোস্তাফিজুর) এ কাজে নামিয়ে দিয়েছি। এছাড়া এখন তো মোস্তাফিজুরের স্কুলে থাকার কথা বলে তিনি চুপ হয়ে যান।