ছোট থেকেই স্বপ্ন ক্রিকেটার হওয়ার। সুযোগ পেয়ে খেলেছেন ডিভিশনসহ বিভিন্ন ক্লাব থেকে। দেখিয়েছেন দুর্দান্ত বোলিং নৈপুণ্য। সম্ভাবনা রয়েছে জাতীয় পর্যায়ে খেলার। ক্রিকেট বোর্ড চাইলে খেলতে পারবেন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে। আঁখি আক্তারের চোখ এখন সেদিকেই। সামাজিকতার বেড়াজালে বন্ধু-বান্ধব না থাকলেও তার বড় সঙ্গী ২২ গজের পিচ।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের লাহারকান্দি এলাকার ইসলাম রাজ বাড়ির কামাল হোসেনের মেয়ে আঁখি। তার আরও ৪ বোন আছে। আঁখি লক্ষ্মীপুর সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যয়নরত। ক্রিকেটারের পাশাপাশি তার আরেকটি স্বপ্ন ছিল পুলিশ হিসেবে নিজেকে দেখার। উচ্চতা কম হওয়ায় তার পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়নি।
সম্প্রতি বার্তা২৪.কম-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আঁখি তার স্বপ্নের গল্প শোনান। এ সময় তিনি বলেন, ক্রিকেট খেলতে এসে আমাকে বন্ধু-বান্ধব হারাতে হয়েছে। এক সময় যারা আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিল তারা এখন কাছে ঘেঁষছে না। তবে আমি এতে হতাশ নই, ২২ গজের পিচকেই বন্ধু করে নিয়েছি। বন্ধুরা না থাকলেও বাবা-মা সঙ্গে আছেন।
বাল্যবিয়ে রোধে বেসরকারি এনজিও প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ২০১৪ সালে মেয়েদের নিয়ে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। কোন অভিজ্ঞতা ছাড়া আঁখি সেখানে খেলার সুযোগ পান। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা ক্রিকেট একাডেমীতে ভর্তি হন। কিন্তু ক্রিকেট খেলার সামগ্রী না থাকায় অনুশীলন বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কারণ প্রাইভেট কোম্পানিতে কম বেতনে চাকুরীরত বাবার পক্ষে খেলার সামগ্রী কিনে দেওয়া সম্ভব ছিল না। ঠিক সে সময় লক্ষ্মীপুরের ক্রিকেট কোচ মনির হোসেন তার পাশে দাঁড়ান। কিনে দেন জার্সি, প্যান্ট ও জুতা। একাডেমিতে বিনামূল্যে অনুশীলন করার সুযোগ করে দেন। এর কিছুদিন পরই ডাক পান বিকেএসপিতে। সেখানে জাতীয় দলের কোচদের অধীনে একমাস অনুশীলন করেছেন।
ফাস্ট বোলার আঁখি ২০১৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম বিভাগ মহিলা ক্রিকেট লিগে আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে ৬ ম্যাচে ১৬ উইকেট পান। ২০১৭ সালে বেগম আনোয়ারা স্পোর্টিং ক্লাব ও ইন্দিরা ক্লাবের হয়ে ২০১৮ সালে একই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন। সর্বশেষ অনূর্ধ্ব-১৮ জাতীয় ক্রিকেট লিগে চট্টগ্রামের বিভাগীয় দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। টুর্নামেন্টটিতে ৬ ম্যাচে ২১ ওভার করেছেন। দুর্দান্ত বোলিংয়ে তুলে নেন ৯ উইকেট।
আঁখির মা নাহার বেগম বলেন, আমার ৫ মেয়ের মধ্যে ২ মেয়ে খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত। আঁখি খুব পরিশ্রমী। এ জন্য সামাজিক বাধা নিষেধ অতিক্রম করে নিজের স্বপ্ন পূরণে কাজ করছে। আশা করি, সে জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পেয়ে দেশের সুনাম বাড়াবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা ক্রিকেট একাডেমীর কোচ মনির হোসেন বলেন, আঁখি প্রতিভাবান। তার বোলিং নৈপুণ্য অসাধারণ। ইতিমধ্যে কয়েকটি টুর্নামেন্টে সে দাপুটে বোলিং করেছে। একজন দক্ষ কোচের অধীনে অনুশীলন করতে পারলে তার খেলা আরও উন্নত হবে।
ক্রিকেটার আঁখি বলেন, জাতীয় দলের ক্রিকেটার তাসকিন ভাইয়ের বোলিং আমার ভালো লাগে। চেষ্টা করছি সেভাবে করার। তবে সুযোগ পেলে জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের জাহানারা আপুর মত বোলিং করতে পারবো। আশা করছি তখন আর আমার বন্ধুরা আমাকে দূরে ঠেলে দিতে পারবে না।
আগামী অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাছাইকৃত ক্রিকেটারদের মধ্যে ২৬ জনের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে তিনজনকে বাছাইয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আঁখি একজন। বিশ্বকাপে সুযোগ পেতে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন আঁখি।