আজ ৪ ডিসেম্বর। পাক-হানাদার মুক্তির ৪৮ বছর পার করেছে লক্ষ্মীপুর। ১৯৭১ সালের এই দিনটিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্মক আক্রমণে হানাদাররা পরাজয়ের শেষ প্রান্তে পৌঁছায়। একপর্যায়ে তারা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। এরমধ্যে দিয়ে পাক-বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের হত্যা, লুট আর নির্যাতনের অবসান হয়।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরকে হানাদার মুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা ৯ মাস জেলার বিভিন্নস্থানে পাক-হানাদার বাহিনীর সাথে ১৯টি সম্মুখ যুদ্ধসহ ২৯টি দুঃসাহসিক অভিযান চালায়। এতে শহীদ হন ১১৪ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েক হাজার মুক্তিকামী বাঙ্গালী।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ২১ মে ভোরে লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর ও দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের হিন্দু পাড়ায় ভয়াবহ তাণ্ডবলীলা চালায় পাক-হানাদার বাহিনী। বাড়ি ঘরে আগুন লাগিয়ে, বহু মানুষকে গুলি ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা। এতে ৩৫ জন নিরস্ত্র মুক্তিকামী বাঙ্গালী শহীদ হন।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল সূত্রে জানা যায়, দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর শহীদদের কবর জিয়ারত ও মোনাজাত, র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান, তোফায়েল আহম্মদ ও রাজ্জাকুল হায়দারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যুদ্ধ চলাকালীন প্রয়াত রফিকুল হায়দার চৌধুরী এবং সুবেদার আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে সাঁড়াশি আক্রমণ চালায়। একাত্তরের ১ ডিসেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ আক্রমণ চলে। এসময় হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে মুক্তিযোদ্ধারা জেলা শহরের মাদাম ব্রিজটি উড়িয়ে দেয়। আজও এর স্মৃতি হিসেবে ব্রিজের লোহার পিলার দাঁড়িয়ে আছে। অবশেষে ৪ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা।
যুদ্ধের সময় পাক-হানাদার বাহিনী শহরের বাগবাড়ীতে ক্যাম্প স্থাপন করে। সেখান থেকেই ৯ মাস জুড়ে তারা লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন স্থানে হামলাগুলো চালায়। মুক্তিকামী হাজার হাজার নর-নারীকে ধরে এনে টর্চার সেলে নির্যাতন এবং যুবতীদের পাশবিক নির্যাতন শেষে হত্যা করে। পরে বাগবাড়ীস্থ গণকবর, মাদাম ব্রিজ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের মরদেহ গর্তে পুঁতে ফেলে। আবার অনেককেই ফেলে দিয়েছে খরস্রোতা রহমতখালী নদীতে। এসব হত্যাযজ্ঞের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে শহরের বাগবাড়ীস্থ গণকবর, মাদাম ব্রিজ, পিয়ারাপুর ব্রিজ ও মজুপুরের কয়েকটি হিন্দু ও মুসলমান বাড়ি।