আজ ৩ ডিসেম্বর। বরগুনার ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানী হানাদারদের হাত থেকে মুক্ত হয় বরগুনা। এর আগে নানা কৌশলে বরগুনাকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্র আ. সত্তার খানের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা বরগুনাকে মুক্ত করে।
ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পরে বরগুনার মুক্তিকামী তরুণরা রাইফেল, বন্দুক ও বাঁশের লাঠি নিয়ে বরগুনার বিভিন স্থানে সামরিক প্রশিক্ষণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতির মধ্যে ২৬ এপ্রিল পাকবাহিনী পটুয়াখালী জেলা দখল করে ফেলে। এ যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এদিকে পাক বাহিনী ১৪মে বরগুনা এসে বিনা বাধায় বরগুনা শহর দখলের পর পাথরঘাটায় বিষখালী নদীর তীরে নির্মম গণহত্যা চালায়। তারপর অন্য থানাগুলো দখল করে পটুয়াখালী চলে যায়। ২৬ মে পাকিস্তানী ক্যাপ্টেন শাফায়াতের নেতৃত্বে ৪ জন পাক সেনা বরগুনা আসে এবং ২৯ ও ৩০ মে বরগুনা জেলখানায় ৭৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে। পরে তাদের জেলা কারাগারের দক্ষিণ পাশে গণ কবর দেয়া হয়।
বরগুনাকে হানাদারমুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধের ৯ম সেক্টরের সাব সেক্টর বুকাবুনিয়া ক্যাম্পের কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদী আল্ ইমাম এর নির্দেশে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের ২ তারিখে কমান্ডার আব্দুস ছত্তার ২১ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বরগুনা শহরের খাকদোন নদীর উত্তর পাড়ে ছয়টি ভাগে বিভক্ত হয়ে অবস্থান নেয়। তারা একজন সহকর্মীকে র্যাকি করার জন্য বরগুনা পাঠায়। তার সংকেত পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা একটি বড় বাচারী নৌকাযোগে বিষখালী নদী দিয়ে বরগুনা রওনা হয়। রাত ৩ টার দিকে তারা বরগুনার খাকদোন নদীর তীরে পোটকাখালী নামক স্থানে অবস্থান নেন।
তাঁরা ফজরের নামাজের আজানকে সংকেত হিসেবে ধরে নিয়ে অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। এ সময় পাক বাহিনী বরগুনায় অবস্থান না করলেও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনী শহরের দখল ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে মুক্তি বাহিনী শহরে প্রবেশ করে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়, বরগুনা থানাসহ সমস্ত বরগুনা দখল করে নেয়। আর এভাবেই বরগুনা শহর হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সত্তার খান জানান, বরগুনাকে মুক্ত করার কৌশল হিসেবে বরগুনা কারাগার, ওয়াপদা কলোনি, জেলা স্কুল, সদর থানা, ওয়ারলেস ষ্টেশন, এসডিওর বাসাসহ বরগুনা শহরকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। এরপর তারা হেঁটে বরগুনা শহরে এসে যে যার অবস্থান নেন। তারা ফজরের আযানকে অভিযান শুরুর সংকেত হিসেবে ব্যবহার করে আযান শুরুর সাথে সাথে ৬টি স্থান থেকে একযোগে ফায়ার করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। রাজাকার এবং পাকিস্তান পন্থি পুলিশরা তখন নিরাপত্তার জন্য জেলখানায় আশ্রয় নিয়েছিল কোনো প্রতিত্তোর না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দ্বিতীয় দফা ফায়ার করে জেলখানার দিকে অগ্রসর হয়। জেলখানায় অবস্থানরত পুলিশ ও রাজাকারদের আত্মসমর্পণ করিয়ে তারা যান তৎকালীন এসডিও আনোয়ার হোসেনের বাসায়।
দিবসটি উপলক্ষে বরগুনার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোর সহযোগিতায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে র্যালী, গণ কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং আলোচনা সভা।