চলতি মাসের ৯ তারিখ মধ্যরাত থেকে দেশের সব নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে ইলিশ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেদের পুনর্বাসনে সরকার বরিশাল বিভাগের তিন লাখ জেলের জন্য ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ করলেও জেলেরা পাচ্ছেন ১৫ কেজি করে।
অভিযোগের তীর স্থানীয় ইউপি (ইউনিয়ন পরিষদ) চেয়ারম্যানদের দিকে থাকলেও তারা বলছেন ভিন্ন কথা। চেয়ারম্যান বলছেন বরাদ্দকৃত চাল আনতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পরিবহন ভাড়া দেয়া হয়নি। তাই কিছু পরিমাণ চাল কম দিয়ে ভাড়ার খরচ উঠানো হচ্ছে।
তেতুলবাড়িয়া গ্রামের জেলে ইসমাইল হাওলাদার বলেন, এমনিতেই সংসার চলে না তারওপর আবার ২২ দিন মাছ ধরা যাবে না। সরকারের পক্ষ থেকে ২০ কেজি করে চাল দেবার কথা থাকলেও আমি ১৫ কেজি চাল পেয়েছি। কেন কম দেওয়া হয়েছে তা জানি না।
একই গ্রামের আরেক জেলে শাহ আলম চৌকিদার বলেন, ২০ কেজিতেই চলে না তারওপর কম দেয়। ২০ কেজির কথা বললে চেয়ারম্যানরা খারাপ ব্যবহার করে। আমরা গরীব মানুষ তাদের সাথে ঝামেলা করে পারবো না। তাই যে ১৫ কেজি চাল দিছে সেটা নিয়াই আইসা পড়ছি।
জেলেদের অভিযোগের বিষয়ে তালতলী উপজেলার বড় বগী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমলগীর হোসেন আলম মুন্সী বার্তাটোয়েন্টিফোর. কমকে বলেন, ইচ্ছে করে কম দিচ্ছি বিষয়টি সে রকম নয়। বরাদ্দের চাল আনার জন্য একটা খরচ আছে। কিন্তু সরকারতো আমাদের কোনো খরচ দেয় নাই। তাই কিছু পরিমাণ চাল কম দিয়ে সেই খরচটা উঠাচ্ছি।
পাথরঘাটার জেলে পল্লীর শামীম, হাসান,মোস্তফা, এমাদুল,আলমগীর ও মাইনুল ১৬ কেজি করে চাল পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
জেলে পল্লীর শামীম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ। এতে করে আমাদের সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। সরকার যে ২০ কেজি চাল দিচ্ছে তাতে আমাদের চলে না। তারওপর ইউপি চেয়ারম্যানরা ৪-৫ কেজি করে কম দিচ্ছে। তবুও নিচ্ছি কারণ না নিয়ে আমাদের কোনো উপায় নেই।
পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকন মো. শহিদ বার্তা টোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, যাতায়াতের খরচ যোগাতে ২ কেজি করে কম দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। খরচের টাকা কোথায় পাবো বলেন ?
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাইন বিল্লাহ্ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, জেলেদের ২০ কেজি চালের কম দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যেসব জনপ্রতিনিধি এ ধরনের কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যাতায়াতের ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চাহিদা দেওয়া হয়েছে আগামীতে যাতায়েতের ভাড়াটা পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, গত ৯ অক্টোবর থেকে আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময়ে ইলিশের আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময়নিষিদ্ধ থাকবে। এ আইন অমান্য করলে জেল অথবা জরিমানা এমনকি উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ সময়ে ৮০ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়ে। একটি বড়ো ইলিশ ২৩ লাখ পর্যন্ত ডিম ছাড়তে পারে। আর এই ডিম পাড়ে মূলত মিঠা পানিতে। তাই আশ্বিনের পূর্ণিমার চার দিন আগে এবং পূর্ণিমার পর ১৮ দিন মোট ২২ দিন দেশের উপকূলীয় অঞ্চল, নদীর মোহনাসহ যেসব জেলা ও নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়, সেখানে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। তবে এ সময় যেসব জেলার জেলেরা মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল, তাদের খাদ্য সহযোগিতা দেওয়া হবে।