বিশ্ব রাজনীতির একটি বড় অংশ জুড়েই থাকে জ্বালানি তেলের বিষয়। সেই ভাবনা থেকেই জ্বালানি তেল উৎপাদনে মাঠে নেমে পড়েন জসিম উদ্দীন টুটুল। ভাবতে অবাক লাগলেও পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিক থেকেই জ্বালানি তেল তৈরি করছেন কাঠমিস্ত্রি টুটুল। শোধনও করছেন নিজের প্রযুক্তিতে। যা বিক্রি হচ্ছে স্থানীয়দের কাছেও।
উদ্ভাবনী এ বিষয়টি রীতিমতো চমক সৃষ্টি করেছে এলাকাজুড়ে। গবেষণার মধ্য দিয়ে ব্যাপকভাবে তৈল উৎপাদন করতে পারলে জ্বালানি আমদানি নির্ভরতা কমবে বলে আশায় বুক বেধেছেন টুটুলসহ এলাকাবাসী।
সহযোগিতা পেলে এ অঞ্চলের মানুষের সব ধরনের জ্বালানি তেল বাজার দরের চেয়ে অর্ধেক দরে দিতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন টুটুল।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হেমায়েতপুর গ্রামের কাঠমিস্ত্রি জসিম উদ্দীন টুটুল ফার্নিচার তৈরির কাজ করেন। গত কয়েক মাস ধরে জ্বালানি তেল তৈরির কাজ শুরু করেন। পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল জ্বালিয়ে তৈরি করছেন পেট্রোল, ডিজেল ও মিথেন গ্যাস। নিজের মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন নিজের তৈরি পেট্রোল দিয়েই।
এছাড়া, অবশিষ্ট ডিজেল বিক্রি করছেন স্থানীয় স্যালোইঞ্জিন মালিকদের কাছে। পেশাগত কাজের ফাঁকে জ্বালানি তেল তৈরির খুঁটিনাটি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তিনি। বড় পরিসরে তেল উৎপাদনের চেষ্টা করছেন বলেও বার্তা২৪.কমকে জানান জসিম।
তিনি বলেন, ‘ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হই। কাজের ফাঁকে পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল জোগাড় করি। শুক্রবার ছুটির দিনে বাড়ির পাশেই এ কাজ করে থাকি।’
উৎপাদনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছ ও পরিষ্কার পলিথিন হলে এক কেজি জ্বালিয়ে ৭০০ গ্রাম তেল পাওয়া যায়। এ তেল বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করেও লাভ থাকবে। আমাকে সহযোগিতা দিলে এ অঞ্চলের মানুষের সব ধরনের জ্বালানি তেলের চাহিদা মিটিয়ে দিতে পারি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আনারুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় বেশ কয়েকজন টুটুলের কাছ থেকে কম দামে পেট্রোল কিনে মোটরসাইকেলে ব্যবহার করছেন। এতে তাদের খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। তাদের মতো আমিও টুটুলের তৈরি পেট্রোল দিয়ে মোটরসাইকেল চালাই। ইঞ্জিনে কোনো সমস্যাও হচ্ছে না।
তেল উৎপাদনের বিষয়টি এলাকাবাসীর কাছে অবিশ্বাস্য ও বিস্ময়কর। তাইতো উৎসুক মানুষের ভিড় জমে থাকে টুটুলের বাড়িতে। তারা জানান, টুটুলের এ কাজ দেখে আগে মনে হয়েছিল পাগলামি। এখন দেখেন সে একজন বিজ্ঞানী হয়ে গেছেন।
টুটুলের এই অভাবনীয় সফলতায় বেজায় খুশি তার পরিবার ও প্রতিবেশীরা। টুটুলের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে জয়নব আক্তার জিম জানায়, আমার আব্বু প্রথম যখন এটি করেন তখন মনে হয়েছিল তিনি পাগলামি করছেন। এখন দেখছি তিনি বড় সফলতা পেয়েছেন।