উৎপাদন খরচের চেয়ে অন্তত ৩শ টাকা লোকসানে প্রতি মণ ধান বিক্রি করছেন নেত্রকোনার হাওড়দ্বীপ খালিয়াজুরীর কৃষকরা। এখানে সরকারিভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে ধান না কেনায় ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে লোকসান দিয়েই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।
একাধিক সূত্র জানায়, খালিয়াজুরীতে এবারের বোরো মৌসুমে প্রতি মণ ধান উৎপাদন খরচ পড়েছে কমপক্ষে ৯শ টাকা। কিন্তু এ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে মণ প্রতি সর্বোচ্চ ছয়শ টাকা দরে। এ হিসেবে এক মণ ধানে কৃষককে লোকসান গুনতে হচ্ছে ৩শ টাকা।
খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলায় এবার বোরো উৎপাদন হয়েছে ৬৩ হাজার ৫৯২ মেট্রিক টন। এখানকার মানুষের বছরে খাদ্য চাহিদা রয়েছে ১৭ হাজার ৩৩৯ মেট্রিক টন ধান। এ অনুযায়ী, এখানে উদ্ধৃত আছে ৪৬ হাজার ২৪৩ মেট্রিক টন ধান। বিপুল পরিমাণ এ ধান উদ্ধৃত থাকলেও সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ১ হাজার ৪০ টাকা মণ দরে কেনা হচ্ছে মাত্র ৫৯৭ মেট্রিক টন ধান। উদ্ধৃত অন্যান্য ধান বাধ্য হয়েই কৃষককে বিক্রি করতে হচ্ছে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে।
তিনি আরও জানান, ওই সব ব্যবসায়ীরা কোনো অবস্থাতেই এবছর ৬শ টাকা মণ দরের চেয়ে বেশি দর দিয়ে ধান কিনতে চাইছেন না।
খালিয়াজুরী সদরের বানিয়াপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য অজিত সরকার বলেন, 'তিনি এবার ১০ একর বোরো জমি আবাদ করে ধান পেয়েছেন মাত্র দেড়শ মণ। এ ধান বিক্রি হয়েছে ৬শ টাকা মণ দরে। তার ধান ফলাতে প্রতি মণে খরচ পড়েছে ১ হাজার টাকা।'
খালিয়াজুরী সদরের দীঘলহাটি গ্রামের কৃষক মলয় চৌধুরী জানান, তার ১৬ একর জমিতে এবার ধান হয়েছে ২৫২ মণ। এ ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার টাকা। অথচ, তা বিক্রি করে পাওয়া গেছে মাত্র ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮শ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চাকুয়া গ্রামের কৃষক হীরালাল, আমানীপুর গ্রামের ফখরুল ইসলাম, উদয়পুর গ্রামের প্রান্তোষ সামন্তসহ অসংখ্য কৃষক এবার প্রতি মণ ধান ৩শ থেকে ৪শ টাকা লোকসানে বিক্রি করছেন।
কৃষকের কেন এত টাকা লোকসান হচ্ছে ? এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা জানান, একদিকে এবার ফলন কম হয়েছে কোল্ড ইনজুরির কারণে। তাই অধিক জমিতেও অল্প পরিমাণ ধান হওয়ায় বেড়েছে উৎপাদন খরচ। অন্যদিকে বাজারে ধানের দাম কম। এছাড়া ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা কৃষকের চোখে ফাঁকি দিয়ে দাড়ি পাল্লার মাধ্যমে মেপে ওজনেও ধান বেশি নেয়। এসব কিছুর বিরূপ প্রভাবেই ধানে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।
খালিয়াজুরী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া জব্বার বলেন, ‘সমস্যা যেন এখানকার কৃষকের পিছু ছাড়ছে না।’
বিগত ১৫ বছরে এখানে অকাল বন্যা, শিলাবৃষ্টি ও রোগ বালাইয়ে ফসল নষ্ট হয়েছে ৯ বার। এবার ক্ষতি হলো চিটায়। একমাত্র বোরো ফসলের উপর নির্ভরশীল এ হাওড় পাড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য পাবার নিশ্চয়তা দেয়া উচিৎ সরকারিভাবে।