চিংড়ির রাজধানী খ্যাত সাতক্ষীরায় এখন কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। ভাইরাসমুক্ত ও উৎপাদন খরচ কম থাকায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দিন দিন বাড়ছে কাঁকড়ার চাষ ও খামারের সংখ্যা।
কৃষকরা বলছেন, বিশেষ করে চিংড়িতে ভাইরাস, রপ্তানি হ্রাস এবং দাম কমে যাওয়ায় চিংড়ি চাষিরা এখন ঝুকছেন কাঁকড়া চাষে।
সরেজমিনে জানা যায়, অনুকূল পরিবেশের কারণে সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলে কাঁকড়া চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় শ্যামনগর, আশাশুনি, দেবহাটা ও কালিগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ৬ সহস্রাধিক কাঁকড়া চাষি এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, জেলায় প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ হেক্টর জমিতে কাঁকড়ার চাষ হয়। এর গড় উৎপাদন প্রতি বছর ৩ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর ৩হাজার ২০০ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়। চলতি বছর ৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন কাঁকড়া উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রকারভেদে প্রতি কেজি কাঁকড়া ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
জেলায় মোট ৪৫২টি কাঁকড়ার ঘের রয়েছে। আর ছোট-বড় মিলে প্রায় ২ হাজার সরকারি-বেসরকারি মোটাতাজাকরণ কাঁকড়ার খামার গড়ে উঠেছে। ৪২ লাখ প্লাস্টিকের খাঁচায় কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ ও চাষ হচ্ছে।
বর্তমানে সাতক্ষীরার এসব কাঁকড়া আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিদেশিদের খাবার টেবিলের মেন্যুতে যেসব খাবার এখন স্থান পাচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম সুস্বাদু বাংলাদেশ থেকে যাওয়া এ শিলা প্রজাতির কাঁকড়া।
কাঁকড়া চাষের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়ার চাহিদা বৃদ্ধির কারণে সাতক্ষীরায় কাঁকড়া চাষ আগ্রহ বাড়াচ্ছে কৃষকদের। কাঁকড়া অল্প জায়গায় বেশি চাষ করা যায়। আমরা স্থানীয় চাষি বা বাজার থেকে ন্যায্য মূল্যে কাঁকড়া কিনি। তারপর প্লাস্টিকের খাঁচায় একটি করে কাঁকড়া রেখে দুই-তিন সপ্তাহ পরিচর্যার পর কাঁকড়ার খোলস পরিবর্তন করা হয়। এতে কাঁকড়ার ৮০ ভাগ ওজন বৃদ্ধি পায়।
চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর কাঁকড়া প্যাকেটজাতকরণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে কাঁকড়ার খোলস নরম থাকে। এর চাহিদাও বেড়েছে। দামও ভালো। ১০০ টাকা কেজি কিনে চাষ করে প্রকার ভেদে ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন। এতে লাভ বেশি ও রোগবালাই কম হওয়ায় সাতক্ষীরায় ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাঁচায় কাঁকড়া চাষ পদ্ধতি।
সাতক্ষীরা জেলা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোপাল চন্দ্র বলেন, সাতক্ষীরা থেকে প্রতি বছর রপ্তানিজাত কাঁকড়া উৎপাদন হয় প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার মেট্রিক টন। আর এসব কাঁকড়া আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া ও তাইওয়ানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। সরকার যদি কাঁকড়া চাষের ওপর স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করে তাহলে এ শিল্পের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম সরদার জানান, সারাদেশের যে পরিমাণ কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি করা হয় তার মধ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উৎপাদিত কাঁকড়ার পরই সাতক্ষীরা জেলার অবস্থান।
বর্তমানে কাঁকড়া রপ্তানি করে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে।