সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে ৮০০ মিটার সরকারি রাস্তার ইট তুলে বিক্রি করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা। এমন অভিযোগ উঠেছে নলতা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পুলক সরকারের বিরুদ্ধে।
ইট তোলার ফলে ওই রাস্তায় যাতায়াতকারীদের ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমের প্রাক্কালে ইট তুলে নেওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসী পুড়ছেন ক্ষোভের আগুনে।
স্থানীয়রা জানান, কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত কাজলা হাটখোলা থেকে উত্তর কাজলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ৮০০ মিটার ইটের সোলিং রাস্তা। এর প্রায় ৫০ হাজার ইট তুলে স্থানীয় মনিরুল ইসলামের কাছে বিক্রি করেছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পুলক সরকার। এ কাজে তাকে সহায়তা করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সুপারভাইজার আশিষ।
সরকারি রাস্তার ইট তুলে বিক্রির ব্যাপারে নলতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিজুল রহমানের কাছে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলক সরকারের বিরুদ্ধে এর আগেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় এক মন্দিরের নামে বরাদ্দকৃত সোলার নিজের বাড়িতে লাগিয়েছেন তিনি। এছাড়া অন্য এক মন্দিরের সোলার আত্মসাৎ করার পর বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় চাপের মুখে তিনি সেটি ফেরত দেন। এর আগে তিনি মন্দিরের নামে বরাদ্দকৃত টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। পুলক সরকারই মন্দির কমিটির সভাপতি, তিনিই সাধারণ সম্পাদক! তার ইচ্ছা অনুযায়ী চলে সব কাজ। এমনকি রাস্তার ইট তোলার বিষয়টি মন্দির কমিটির কেউ জানেও না।
উপজেলা এলজিইডি’র সুপারভাইজার আশিসের বিরুদ্ধেও এর আগে রাস্তার গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পুলক সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাস্তাটি কার্পেটিং করার জন্য ছবি তুলতে হবে, তাই উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার সাহেব রাস্তার ইট তুলতে বলেছিল। পরে এমপি (সংসদ সদস্য) মহোদয়ের প্রতিনিধি আব্দুল খালেক ও জেলা পরিষদের সদস্য আসাদুর রহমান সেলিমের কথামতো ইটগুলো তোলা হয়েছে।’
ইট বিক্রির টাকা কী হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইট বিক্রির সব টাকা এখনো পাইনি। টাকা পেলে মন্দির সংস্কারের কাজে ব্যয় করা হবে।
ইতোপূর্বে মন্দিরের জন্য কোনো সরকারি বরাদ্দ পেয়েছেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করলেও এক পর্যায়ে, পাঁচ বছর আগে বরাদ্দ পাওয়ার কথা স্বীকার করেন।
এলজিইডির সুপারভাইজার আশিষ বলেন, রাস্তার ইট তোলার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। ওয়ার্ড সভাপতি পুলক সরকার নিজেই এ কাজটি করেছেন। তবে কেউ যদি মসজিদ বা মন্দিরের কাজের জন্য রাস্তার ইট তোলে, তাহলে অনুমতি নিয়ে তুলতে পারে। আমার বিরুদ্ধে রাস্তার ধারের গাছ কাটার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এমপির প্রতিনিধি আব্দুল খালেক বলেন, রাস্তার ইট তোলার বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। পুলকের সাথে এ বিষয়ে আমার কোনো কথা হয়নি। রাস্তা থেকে ইট তোলার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
নলতা ইউপির চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান জানান, স্থানীয় লোকজন রাস্তা থেকে ইট তোলার খবর আমাকে জানালে আমি বিষয়টি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে জানিয়েছি। সোমবার (১ এপ্রিল) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি।