দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা থেকে প্রায় ১৩০ নটিক্যাল মাইল দূরে গভীর সমুদ্রে প্রায় দেড় যুগ আগে জেগে ওঠে বিশাল এক বালুচর। এক সময়, এর নামকরণ করা হয় ‘বঙ্গবন্ধু চর’। সুন্দরবনের দুবলারচর ও হিরণ পয়েন্ট থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ-পূর্বে এর অবস্থান। এর দৈর্ঘ্য ৮ মাইল ও প্রস্থ ৬ মাইল।
প্রতিদিনের জোয়ার ভাটায় চরটিতে ভেসে আসে নানা প্রজাতির ফলের গাছপালা, লতাপাতা ও গুল্ম। আর এসবেই চরটিতে জন্ম নিচ্ছে নানা জাতের বৃক্ষ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু সুন্দরী, কলা, কচু ও বাদাম গাছ বেড়ে উঠছে সেখানে। রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পাখির বসাবসও।
পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের সিএফ আমির হোসাইন চৌধুরী জানান, ১৮ থেকে ২০ বছর আগে বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা চরটিতে কয়েকজন জেলে ‘বঙ্গবন্ধুর চর’ নামকরণ করেন। সেই থেকে চরটি এ নামেই পরিচিত। এ চরে এখন ইকো-ট্যুরিস্টদের (প্রতিবেশ পর্যটক) পদচারণা বেড়েই চলছে। তবে আপাতত সেখানে কোনো পর্যটন স্পট করার পরিকল্পনা নেই।
আমির হোসাইন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু চরের পাশে বনবিভাগের নীল কমল অভয়ারণ্য রয়েছে। ওই চরটাও অভয়ারণ্যের অংশ এবং এটা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। যেহেতু ওটা (বঙ্গবন্ধুর চর) ন্যাচারাল ফরেস্ট, তাই ওটাকেও সংরক্ষণ করা আমাদের কাজ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বাগেরহাটের মোংলা অঞ্চলের সমন্বয়কারী নুর আলম শেখ বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ইকো-ট্যুরিষ্ট ও জেলেদের রক্ষায় বঙ্গবন্ধুর চরে সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ, জলসীমায় চোরাচালান রোধ, মোংলা ও পায়রা বন্দরগামী দেশি-বিদেশি জাহাজ এবং জেলেদের নিরাপত্তার দাবির বিষয়টি দিনকে দিন গুরুত্ব পাচ্ছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে সমুদ্রগামী জেলেদের জীবনমান উন্নীত হবে।
বাগেরহাটের মোংলা কোষ্টগার্ড সদর দপ্তরের অপারেশন কর্মকর্তা লে. মো. বায়েজীদ জানান, বাংলাদেশ জলসীমায় চোরাচালান রোধ, মোংলা ও পায়রা বন্দরগামী দেশি-বিদেশি জাহাজসহ বঙ্গোপসাগরের নিরাপত্তায় সরকার সাগর বক্ষে জেগে ওঠা বঙ্গবন্ধু চরে কোষ্ট গার্ডের বেইজের নির্মাণ করতে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, কোস্ট গার্ডের বেইজ নির্মাণ হলে মোংলা ও পায়রা বন্দরে দেশি ও বিদেশি জাহাজের নিরাপত্তার জন্য মনিটরিং সহজ হবে। জাহাজগুলো নজরদারির মধ্যে রাখার পাশাপাশি রাডারের মাধ্যমে এর গতিবিধিও ট্র্যাক করা যাবে। সমুদ্রগামী জাহাজ ও জেলেদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।